"পাহাড়ের রাণী" দার্জিলিং

 "পাহাড়ের রাণী"

    বাংলায় একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে "উঠলো বাই তো কটক যাই" , না আমরা কটক যাচ্ছি না , অফিসের চার বন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দার্জিলিং ঘুরতে যাচ্ছি । সিদ্ধান্তটা হঠাৎ নেওয়া । সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের রাণী কে দেখার ইচ্ছা নিয়ে রেলের তৎকাল পরিষেবার মাধ্যমে টিকিট কেটে নির্দিষ্ট দিনে নবদ্বীপ ধাম রেলস্টেশন থেকে" তিস্তা-তোর্সা " একপ্রেসে রওনা হলাম এন.জে.পি. হয়ে দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে। কোথাও ঘুরতে গেলে রেল ভ্রমণের আনন্দ থেকেই আমি ভ্রমণের প্রথম স্বাদটা পেতে শুরু করি । গোধূলি আলোয় ট্রেনের কামরার কাঁচের ভিতর দিয়ে দেখতে পাচ্ছি শস্য শ্যামলা রূপসী সোনার বাংলার গ্রাম ও শহরের মধ্যে দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি । এরপর রাতের অন্ধকার চিরে ট্রেন চলতে থাকলো ।পরের দিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে, সেখান থেকে গাড়িতে রওনা হলাম দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে । 




    ভোর বেলা শিলিগুড়ি শহরের মসৃণ ফাঁকা রাস্তা ধরে কিছুটা যাওয়ার পর সুকনা ফরেস্টের মনোরম সবুজ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে আমরা রোহিণী চেক পোস্টে পৌঁছালাম । এরপর পাহাড়ি চড়াই পথ দিয়ে কার্সিয়াং , সোনাদা, ঘুম হয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য কে সঙ্গী করে আমরা এগোতে থাকলাম । কার্সিয়াংর পর থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেলো । পাহাড়ের প্রতিটা ইঞ্চি ওক ,পাইন,দেওদার,ফার্ণ ও অন্যান্য নানা প্রজাতির গাছ দিয়ে সাজানো ছায়ামাখা সবুজ পথ । অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত মেঘরাশি তার মাঝখানে সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘা বিরাজমান । যদিও তার শিখরে আড়াল করা মেঘেদের আনাগোনা । চারদিকের প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে মনে হচ্ছে ঈশ্বর তার নিজের খুশিতে ও আনন্দে আমাদের জন্য ক্যানভাসে সব মনোমুগ্ধকর ছবি এঁকে রেখেছেন ,যা দেখে আমাদের চোখ ও মন প্রতিনিয়ত প্রফুল্ল হচ্ছে । এইভাবে এঁকে বেঁকে চলতে চলতে হিমেল হাওয়ার পরশ অনুভব করতে করতে পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন প্রকারের অর্কিড ও ফুল দিয়ে সাজানো বাড়ীগুলোর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং শহরে । ম্যালের (মল) একদম কাছেই আমাদের হোটেল হওয়ার কারণে বেশ কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে হোটেলে পৌঁছালাম । হোটেলের ঘরের জানালা দিয়েই দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ হিমালয়ের বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া ।জানালা খুললেই মেঘ পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে ঘরের মধ্যে । কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা সবাই বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং শহরকে ঘুরে দেখার জন্য । 




    ম্যালের পাশে মহাকাল মার্কেটের পাশ দিয়ে আমরা গিয়ে পৌঁছালাম মহাকাল মন্দিরে । বেশ উঁচুতে অবস্থিত পাইনে ঘেরা নির্জন এই মন্দিরের চারিদিকের পরিবেশ খুবই সুন্দর । এখান থেকেই দার্জিলিং শহরকে পাখির চোখে দেখা যায় ও মেঘের চাদরে ঘিরে ধরা এই শহরের মায়াবি রূপ দেখতেও খুবই ভালো লাগে । আমার মনে হয় দার্জিলিংএ চকবাজার কেনাকাটার জন্য আদর্শ জায়গা । এখানে গরম পোশাক ও অনান্য জিনিসপত্র কিছুটা সস্তা । সুতরাং ওখানে আমাদের একবার যেতেই হলো । সন্ধ্যা থেকে বেশ কিছুটা সময় ম্যালের সুন্দর ঠান্ডা মনোরম পরিবেশের মধ্যে ভিন্ন ভাষাভাষী পর্যটকদের হৈহুল্লোর দেখে ও নিজেরাও আনন্দ করে আমরা হোটেলে ফিরলাম। পরের দিন ভোর বেলায় রওনা হলাম টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে । সূর্যোদয় ও ঐ সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর আলো পরে যে রক্তিম রূপের সৃষ্টি হয় সেটা দেখার জন্যই আমাদের এই যাত্রা । কুয়াশা ও মেঘের চাদরে ঢেকে থাকার কারণে কোন ইচ্ছাই পূর্ণ হলো না । ফেরার পথে প্রথমে গেলাম বাতাসিয়া লুপ । এখানে শহীদের স্মৃতিতে ফলক ও স্মৃতি স্তম্ভ আছে । চক্রাকারে রেল লাইন কে নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে । বিভিন্ন রকমের ফুলের গাছ ও অন্যান্য গাছ দিয়ে এই জায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো । এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ খুব ভালো দেখতে পাওয়া যায় । এরপর গাড়িতে বেশ কিছু উৎরাই পথে আমরা রক গার্ডেনে পৌঁছালাম । পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে এটি। খুব সুন্দর একটা ঝর্ণা আছে এখানে । ফুল ও অন্যান্য গাছ দিয়ে বাগানটি সুন্দর করে সাজানো । 



    দুপুরে দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত টয় ট্রেনে "জয় রাইডে " সওয়ার হলাম । বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল পঁয়তাল্লিশ বছর আগে মা ও দিদির সাথে টয় ট্রেনে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়িতে ফেরার সময়ের সেই আনন্দের স্মৃতি গুলো। কখনো পাহাড়ের পাশের বিভিন্ন ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে কখনো সুন্দর করে সাজানো বাড়ীর পাশ দিয়ে অথবা বাজারের মধ্যে দিয়ে হর্ণ বাজাতে বাজাতে ট্রেন এগিয়ে চললো ঘুমের উদ্দেশ্যে। চারদিকের প্রকৃতির সৌন্দর্য ও ট্রেনে চরার আনন্দ শিশুসুলভ মনে প্রানভোরে উপভোগ করলাম। পরের দিন খুব সকালে বেড়িয়ে পরলাম লামহাট্টা র উদ্দেশ্যে । যাওয়ার পথে সবুজে ঘেরা নির্জন পরিবেশে অবস্থিত জাপানি টেম্পল ও প্যাগোডা দেখতে গেলাম । এখানে অনেক অর্কিড ও ফুলের গাছ আছে । এখানকার বুদ্ধ মূর্তির রঙ সম্পূর্ণ সোনালি । ঘুম মনেস্ট্রিও খুব সুন্দর । লামহাট্টা যাওয়ার রাস্তাটি খুবই সুন্দর । রাস্তার দুই ধারে সবুজ পাইন বন তার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে কালো পিচ ঢালা মসৃণ রাস্তা । এখানকার ইকো পার্কটিও খুব সুন্দর । পাইন বনের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত লেক দুটি দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও ভোলার নয় । বরুণদেব সহায় না থাকার কারণে মেঘের আঁচলে ঢাকা বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের রাণীর সৌন্দর্য দেখার ইচ্ছা এবার আমাদের পূরণ হলো না । আরো অনেক কিছু দেখার ইচ্ছা থাকলেও সময়াভাবে পরের দিন লেপচাজগৎ, সীমানা পয়েন্ট, পশুপতি মার্কেট, গোপালধারা টি গার্ডেন, মিরিক দেখে শিলিগুড়ি পৌঁছালাম রাতের দার্জিলিং মেল ধরবো বলে । চা গাছের সবুজ কার্পেট বিছানো অথবা সবুজ পাইন গাছে ঘেরা এই রাস্তার দুই ধারের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন । এবার আমাদের ঘরে ফেরার পালা ।






কিভাবে যাবেন:- ট্রেনে, প্লেনে অথবা সড়ক পথে শিলিগুড়ি পৌঁছে সেখান থেকে বাসে অথবা গাড়ি তে দার্জিলিং ।

কোথায় থাকবেন:-বিভিন্ন মানের ও দামের প্রচুর হোটেল আছে এখানে ।

পার্থ সারথী মণ্ডল
ঘোষ পুকুর লেন
সেগুন বাগান
পোস্ট কৃষ্ণনগর জেলা নদীয়া
মোবাইল নাম্বার 7001323045











কোন মন্তব্য নেই

Feature Post

সামনে এলো Galaxy A23 5G এবং Galaxy A13 5G এর স্পেসিফিকেশন। সম্পূর্ণ তথ্য আপনাদের জন্য।

      অবশেষে Samsung Galaxy A23 5G এবং Galaxy A13 5G স্মার্টফোনের দাম এবং কবে থেকে পাওয়া যাবে সেটা নিশ্চিত করেছে । দুটি স্মার্টফোনই তাইওয়ান...

Popular Post

fpm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.
close