চলুন বেরিয়ে আসি ভারতের রাজধানী, দিল্লী
দিল্লি, ভারতের রাজধানী দিল্লি। সেই দিল্লিতেই হঠাৎ করেই যাওয়ার সুযোগ হলো একটা ফ্যাক্টরি ভিজিটের জন্য । তো ভাবলাম যাওয়া যখন হবেই সেই সুযোগে দিল্লী ঘুরে নিলে কেমন হয়! যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্ল্যান করে ফেললাম। আমাদের ফ্লাইট ছিল 27 শে এপ্রিল সকাল সাড়ে ছটায়। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । প্রথমেই গেলাম ফ্যাক্টরি ভিজিটের জন্য গ্রেটার নয়ডা। এটা কিন্তু আসলে উত্তরপ্রদেশের অংশ ।
ফ্যাক্টরি ভিজিট এর পর রাতটা কাটলো হোটেল রেডিসন ব্লু তে । হোটেলে তো এলাহি আয়োজন। একে ফাইভ স্টার হোটেল, তারমধ্যে আবার পুরোটাই কোম্পানির তরফ থেকে অ্যারেঞ্জ করা। হোটেলে আমার একটা জিনিস খুবই ভালো লেগেছে কারণ হল সিটি ভিউ।
হোটেলে ওই রাতটা কাটিয়ে পরের দিন সকালে হোটেল ছেড়ে সোজা গেলাম নিজামুদ্দিন রেলওয় স্টেশন। সেখান থেকে গতিমান এক্সপ্রেস আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট টিকিট আমাদের আগের থেকেই কাটা ছিল। ট্রেনে একটি ভারী সুন্দর অভিজ্ঞতা হল, লাস্ট পর্যন্ত নোট করেছিলাম ট্রেনটি 180km/hr এ চলছে। ট্রেনের স্পিড টা আন্দাজ করতে পারছেন? আগ্রা ক্যান্টনমেন্টে নেমে সোজা গেলাম হোটেল বাইক রাইড। হোটেলটি স্টেশনের একদম কাছেই। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি দর্শন করতে, তাজমহল।
তাজমহল যাওয়ার জন্য অটো আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাবেন, তবে ওঠার আগে অবশ্যই দাম দর করে নিতে হবে। তাজমহলের অভিজ্ঞতা যদি বলতে যাই তাহলে আমাকে আরেকটা আলাদা করে উপন্যাস লিখতে হয়। তাজমহলে না গেলে সত্যিই ছবি দেখে বোঝা সম্ভব নয় যে একে কেন পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের একটি বলা হয়। তাজমহল থেকে বেরিয়ে আমরা একটু খাবারের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সেখানে ননভেজ খাবার বড়ই দুর্লভ।
যাই হোক অনেক খুঁজে একটি ননভেজ খাবার রেস্তোরা পাওয়া গেল। ভুরিভোজ করে আবার একটি অটো ভাড়া করে গেলাম আগ্রা ফোর্ট। তবে আগ্রা ফোর্টের অধিকাংশ জায়গাতেই সংরক্ষণের অভাব স্পষ্ট, যেটা হেরিটেজ সাইটে একেবারেই কাম্য নয়। একটা ছোট্ট তথ্য জানিয়ে রাখি, আপনারা যদি চান সরকারি গাইড সব জায়গাতেই পেয়ে যাবেন। ফোর্ট ঘুরে অটো করে আবার সোজা হোটেল।
আগ্রা তে এসেছি আর আগ্রার চাট খাব না তাই হয় না। তো রাতে সোজা গেলাম চাট গলি। চাট গলিতে অবশ্যই মিস করবেন না আলু টিক্কি, বাস্কেট চাট আর কুলফি ফালুদা। রাত কাটিয়ে নেক্সট দিন আবার রওনা দিলাম দিল্লি। নিজামুদ্দিন স্টেশন ফেরার সময় আমরা গতিমান এক্সপ্রেস পাইনি ঠিকই তবে যে ট্রেনটি তে এসছি সেটি রাইট টাইম ছিল। স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি করে আবার এক নতুন গন্তব্য, হোটেল কেলভিস। হোটেলটি নেওয়া হয় এয়ারপোর্টের কাছে যাতে ফিরতি পথে এয়ারপোর্ট যেতে অনেকটা ট্রাভেল না করতে হয়।
চেক ইন করে বিকালে বেরিয়ে পড়লাম সরোজিনী মার্কেট সেই একইভাবে অটো ভাড়া করে। আপনারা আপনাদের সুবিধা মত উবের অটো বুক করতে পারেন অথবা রোডসাইড অটো নিতে পারেন। তবে রোডসাইড অটোর ক্ষেত্রে আমি একটা কথাই সাজেস্ট করব একটু ডিস্টেন্স টা দেখে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন। সরোজিনী মার্কেট থেকে দুই হাত ভর্তি শপিং করে চললাম ইন্ডিয়া গেট। ইন্ডিয়া গেটের উল্টোদিকেই রাষ্ট্রপতি ভবন যদিও এখন সেটা অনেকটাই ব্যারিকেড করা। রাতে হোটেলে ফিরে একটা নতুন আইটেম খেলাম কাদাই চিকেন। দিল্লিতে আছি আর নতুন নতুন খাবার ট্রাই করবো না তাই কি কখনো হয়!
পরের দিন সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম দিল্লী দর্শনে। প্রথমেই গেলাম লোটাস টেম্পল। এখানকার কারিগরি সত্যিই অসাধারণ। এখান থেকে সোজা যন্তর মন্তর হয়ে গেলাম রেড ফোর্ট। একটা মজার জিনিস চোখে পরলো আপনি যে পথ ই রেডফোর্ড পৌঁছান না কেন তারা আপনাকে ফোর্ট এর এক্সিট গেটে নামাবে।
সেখান থেকে আরো 10 টাকা খরচা করে আপনাকে মেন এন্ট্রান্স এ পৌঁছাতে হবে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখব যন্তর-মন্তর ছাড়া বাকি সব জায়গাতেই আমরা আগের থেকে অনলাইন টিকিট করিয়ে নিয়েছিলাম। ফলে আমাদের লাইন দিতে হয়নি এবং প্রবেশমূল্য কিছুটা কম পড়েছে। রেড ফোর্ট এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। সেই ইতিহাসের কিছু অংশ এর ভেতরের মিউজিয়াম এবং স্লাইডশোর সাথে উপভোগ করতে পারবেন।
এখান থেকে আবার সোজা চলে গেলাম এয়ারপোর্ট এরিয়া যেখানে হোটেলে আমরা লাগেজ গুলো রাখা ছিল। খাওয়া-দাওয়া করে লাগেজ নিয়ে আবার সোজা এয়ারপোর্ট। ফিরতে তো হবে। তবে দুপুরের খাবারে চমক ছিল, দুপুরে খেয়ে ছিলাম চিকেন কুক্কাড্। আর কি এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট ধরে আবার সোজা নেতাজি সুভাষ বিমানবন্দর কলকাতা। শেষে একটাই কথা স্মরণ করিয়ে দেবো, দিল্লি বা আগ্রা তে গেলে কখনোই স্ট্রিট ফুড মিস করবেন না আর খুব ঠান্ডা বা খুব গরমের সময় টা ওখানে না যাওয়া ই ভালো।
Social Media তে আসুন, আগে আপডেট পাবার জন্য ।
Facebook Page | : | |
Instagram Page | : | |
Youtube Link | : | |
Twitter | : | |
Telegram | : |
কোন মন্তব্য নেই